Home / Uncategorized / বগুড়ায় আ.লীগ নেতাকে ছিনিয়ে নেওয়ার মামলায় গ্রেফতার ২১, পুরুষশূন্য গ্রাম

বগুড়ায় আ.লীগ নেতাকে ছিনিয়ে নেওয়ার মামলায় গ্রেফতার ২১, পুরুষশূন্য গ্রাম


বগুড়ার শিবগঞ্জে পুলিশের ওপর হামলা করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রিজ্জাকুল ইসলাম রাজুকে (৪৫) ছিনিয়ে নেওয়ার মামলায় ১১ নারীসহ ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রবিবার (৫ অক্টোবর) রাতভর উপজেলার চকভোলা খাঁ গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশি সাঁড়াশি অভিযান শুরু করায় গ্রেফতার আতঙ্কে গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।

এর আগে, হামলার শিকার শিবগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল মামুন সরকারি কাজে বাধা, আসামি ছিনতাইসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২০ জনের নাম উল্লেখ করে ২২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই পুলিশ কর্মকর্তা এক লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার পরও আওয়ামী লীগ নেতা রাজুকে গ্রেফতার করায় স্বজনরা ক্ষুব্ধ হয়ে হামলা চালিয়ে তাকে হাতকড়াসহ ছিনিয়ে নেন।

সোমবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুজ্জামান শাহীন জানান, গ্রেফতার ২১ আসামিকে আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। ছিনিয়ে নেওয়া
আসামিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। প্রধান আসামিসহ অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। নিরীহ কাউকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। 

তিনি আরও জানান, পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদন্ত
করছেন। এ ছাড়া তাদের কোনও গাফিলতি আছে কি না, সে ব্যাপারেও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গাফিলতির বিষয়টি নিশ্চিত হলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গ্রেফতাররা হলেন- বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার চকভোলা খাঁ গ্রামের মৃত সরাবুল্লা প্রামাণিকের ছেলে মো. মাহবুর (৪৮), তার স্ত্রী মোছা. পারুল (৩৮) ও ছেলে বাপ্পী হাসান (২৭), একই গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে মো. সাইফুল (৪২), বেলাল ফকিরের ছেলে মো. জাকির (৩০), আয়েজ উদ্দিনের ছেলে শরিফুল ইসলাম (২৮), মৃত মজিবরের ছেলে আবদুল বাকি (৪০), মৃত হযরত আলীর ছেলে শহীদ হোসেন (৩৫), মো. আবদুলের ছেলে মো. আপেল (২৮), মৃত ফাওয়ার ছেলে রফিকুল ইসলাম (৪৮), মারুফ হাসানের স্ত্রী মোছা. রাফিয়া (১৮), আফতাব হোসেনের স্ত্রী মোছা. রেবেকা (৩০), আবদুস সামাদের স্ত্রী মোছা. স্বপ্না (৪০), মো. শাহীনের স্ত্রী মোছা. কাবাসী (৪৫), মো. জাকিরের স্ত্রী খাদিজা খাতুন (২২), খোরশেদ আলমের স্ত্রী মোছা. নাজমা (৩০), মো. খলিলের স্ত্রী মোছা. আসমা (৩০), জুয়েল হকের স্ত্রী আসমা খাতুন (৩৫), মো. শামীমের স্ত্রী মোছা. রুমি (৩৮), মো. সাইফুলের স্ত্রী মোছা. আয়শা (৩৯) এবং মৃত রমজানের ছেলে মাহাতাব উদ্দিন (৪৫)।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, রিজ্জাকুল ইসলাম রাজু বগুড়া শিবগঞ্জ সদরের চকভোলা খাঁ এলাকার বদর উদ্দিন বদরের ছেলে। তিনি শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রাজুর বিরুদ্ধে হত্যাসহ ১২টি মামলা হয়। এরপর থেকে তিনি পালিয়ে ছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতা রাজু ৪ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিজ গ্রামে বাড়ির পাশে মামাতো ভাই শাহ আলমের বিয়ের অনুষ্ঠানে আসেন। গোপনে এমন খবর পেয়ে শিবগঞ্জ থানার এসআই আল মামুন সাদা পোশাকে মোটরসাইকেলে এক কনস্টেবলকে নিয়ে বাড়িতে অভিযান চালান। একপর্যায়ে তাকে গ্রেফতারের পর এক হাতে হাতকড়া পরানো হয়। তাকে মোটরসাইকেলে তুলে থানায় আনার চেষ্টা করলে বিপুলসংখ্যক নারী ও পুরুষ আত্মীয়স্বজন মোটরসাইকেল ঘিরে ফেলেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে রাজুর স্বজনদের ধস্তাধস্তি হয়। এরপর তারা হাতকড়া পরিহিত অবস্থায় রাজুকে ছিনিয়ে নেন। পরে রাজু দৌড়ে পালিয়ে যান। এ সময় পুলিশ সদস্যরা ধাওয়া করলে গ্রামবাসী কাদা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সুযোগে রাজু পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

এ ব্যাপারে এসআই আল মামুন রবিবার শিবগঞ্জ থানায় সরকারি কাজে বাধা, মারপিটসহ বিভিন্ন ধারায় পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা রিজ্জাকুল ইসলাম রাজুকে প্রধান করে ২০ জনের নাম উল্লেখসহ ২২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর পুলিশ রবিবার দিন ও রাতভর ওই গ্রামে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে একই পরিবারের তিন সদস্যসহ ১১ নারী ও ১০ পুরুষকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার আতঙ্কে চকভোলা খাঁ গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।

গ্রামবাসী ও স্বজনরা অভিযোগ করেন, শিবগঞ্জ থানার এসআই আল মামুন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রিজ্জাকুল ইসলাম রাজুকে গ্রেফতার করবেন না, এমন আশ্বাসে কয়েকদিন আগে এক লাখ টাকা ঘুষ নেন। এরপরও তাকে গ্রেফতার করতে আসা ও হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে স্বজন ও গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির পর রাজুকে ছিনিয়ে নেন। এরপর তাকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন। 

তারা আরও অভিযোগ করেন, পুলিশ নিরীহ গ্রামবাসীদের গ্রেফতার করছে। এতে তারা গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন। ফলে পুরো চকভোলা খাঁ গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। তারা নিরপরাধ নিরীহ জনগণকে গ্রেফতার না করতে অনুরোধ জানিয়েছেন।





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *